শেখ নাদীর শাহ্, বাংলা হেডলাইনস পাইকগাছা(খুলনা) প্রতিনিধি: মৌসুমের শেষ সময়ে জমে উঠেছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার অন্যতম প্রধান পাইকারি মোকাম কপিলমুনির সুপারি হাট।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে আবহাওয়ার প্রতিকুল
পরিবেশে এবছর জনপদে সুপারির ফলন তুলনামূলক কম।তারপর শুরুতে বাজার দর ভাল না হলেও মৌসুমের
শেষ সময়ে আশানুরূপ দাম পেয়ে সন্তুষ্ট বাগান মালিক থেকে শুরু করে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাসহ সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সুত্র জানায়, পাইকগাছা উপজেলার অন্তত ৪০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৪০
হাজার ৪০০টি সুপারি বাগান রয়েছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে কপিলমুনি, হরিঢালী, রাড়ুলী
ও গদাইপুর এ ৪ ইউনিয়নে সুপারি গাছ বেশি
রয়েছে। আর চাঁদখালী ও পৌরসভার আংশিক এলাকায় সুপারি গাছ রয়েছে। লবণাক্ততার
বিরুপ প্রভাবে অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতে সুপারি গাছ ভাল হয়না।
উপজেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল সুপারি নিয়ে প্রতিবেদনকালে সরেজমিনে উপজেলার
বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, মৌসুমের শেষ সময়ে উপজেলার কপিলমুনি,
আগড়ঘাটা, গদাইপুর, বাঁকা, নতুন বাজার, রাড়ুলীসহ বিভিন্ন হাট-বাজার গুলোতে
মৌসুমের শেষ সময়ে বেশ চড়া দামে সুপারি বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয়দের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী এলাকার ব্যবসায়ীরা সুপারি পানিতে ভিজিয়ে (মজিয়ে-পঁচিয়ে)
গুদামজাত করতে সুপারি সংগ্রহে হাট-বাজারগুলোতে
ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাখি বা গুদাম ব্যবসায়ীরা বাজারে
আসায় সুপারির দাম বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কুড়ি (৫৫ গন্ডা) বা ২২০টি হিসেবে সুপারি বিক্রি
হচ্ছে, সাইজ ও রং ভেদে ৩৫০ থেকে ৪২০টাকা পর্যন্ত, মাঝারি সাইজের প্রতি কুড়ি সুপারি
২৮০ থেকে ৩৪০ টাকা ও ছোট (ছাট) প্রতি কুড়ি সুপারি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা দরে।
স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উপজেলার
বিভিন্ন এলাকা থেকে মান অনুযায়ী কুড়ি প্রতি সুপারি কিনে সেগুলো উপজেলার কপিলমুনি, সোলাদানা,
বড়দল, শান্তাসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকেন।
বড় ব্যবসায়ীরা মৌসুম জুড়ে সুপারি বিকিকিনির সাথে জড়িত। তবে রাখি বা গুদাম ব্যবসায়ীরা মৌসুমের শুরুতে সুপারি না কেনায় প্রথম দিকে সুপারির দাম তুলনামুলক কম থাকে। কেননা, প্রথম দিকের সুপারি পানিতে ভেঁজালে (পঁচালে) এর মাজ পঁচা দেখা দেয়।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, যে হাটে যেমন পরিমান ভাল
সুপারি কিনতে পারেন সে অনুযায়ী
গুদামজাত করে বাকি গুলো পরের হাটে পুনরায় বিক্রি করে দেন। তবে মৌসুম শেষে
সুপারির দর পতন হলে অনেক সময় লোকসানও গুনতে হয়।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে উপজেলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি
সুপারির হাটে কথা হয় একাধিক বিক্রেতা জাকাত আলী, কেচমত মোড়ল, আবুল কাশেম, দীন মাহমুদদের
সাথে। তারা জানান, এ বছর সুপারির ফলন কম হয়েছে। তার উপর মৌসুমের প্রথম দিকে দাম কম
ছিল। মাঝখানে দর উঠা-নামা করলেও শেষ সময়ে কয়েক হাটে সুপারি তুলনামূলক কম উঠলেও দাম
পাওয়া যাচ্ছে।
গদাইপুরের সুপারি বাগান মালিক ও ব্যবসাযী ফারুখ হোসেন
বলছিলেন, অঞ্চল ভেদে চলতি বছর সুপারির ফলন কম-বেশি হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে মাঝ পর্যন্ত
সুপারির দাম ওঠা-নামা করলেও শেষ সময়ে বাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
স্থানীয় বাগান মালিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, এ অঞ্চলের সুপারির
মান বেশ ভাল। বিশেষ করে এখানকার সুপারিতে কষ বেশি। ফলে এ অঞ্চলের সুপারির কদর বা চাহিদা
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আলাদা।
জানাযায়, সারাদেশে সুপারির চাহিদা থাকলেও বৃহত্তর সিলেটে এর বহুমুখী ব্যবহার সেই প্রাচীনকাল
থেকে। অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ক্ষেত্রে সৌখিন এই খাদ্য
বা নেশা পণ্যটির বিকল্প নেই। চায়ের শেষে যেমন সুপারির স্বাদ অসাধারণ তেমনি আহারের পর
এক চিলতে বা ফালি পান মুখে না দিলেই যেন নয়। এক কথায় চির চেনা রসনা বিলাসী বাঙালির
সাথে পান মিশে আছে সেই প্রাচীন কাল থেকে।
এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা কৃষি
কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জাহাঙ্গীর আলম
জানান, সুপারি এ অঞ্চলের একটি অর্থকরী গুরুত্বপূর্ণ ফসল। তাছাড়া এ এলাকার
সুপারির মানও ভালো। তবে লম্বা সুপারি গাছগুলো মরে যাওয়ায় অথবা কেঁটে
ফেলায় নতুন করে সুপারির বাগান সৃষ্টি বা গড়ে উঠছে না। এক্ষেত্রে কৃষি
অফিসের পক্ষে নতুন নতুন সুপারির বাগান তৈরির জন্য বাগান মালিক ও কৃষকদের
উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।