মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৫২ পূর্বাহ্ন

বিভ্রান্ত না হয়ে ভোটের প্রস্তুতি নিন: তারেক রহমান

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৪২ দেখা হয়েছে

বাংলা হেডলাইনস: ‘বিভ্রান্ত না হয়ে’ জনগণকে নির্বাচনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বুধবার বিকালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্বচ্ছ। জনগণ কোন রাজনৈতিক দলকে গ্রহণ করবে কিংবা বর্জন করবে, নির্বাচনের মাধ্যমে সেই রায় দেবে জনগণের আদালত।

“তবে যারা জনগণের আদালতের রায়ের মুখোমুখি হতে ভয় পায়, কিংবা যাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে, তারাই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নানারকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।”

দেশের জনগণের উদ্দেশে বিএনপি নেতা বলেন, “আপনারা ধৈর্য হারাবেন না, নির্বাচনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে থাকুন। নির্বাচন কমিশন তাদের অর্পিত দায়িত্ব যথারীতি পালন করবে, সেই বিশ্বাস রাখুন।”

আর দলের নেতা-কর্মৗদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, “আপনারা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। বরং সতর্ক থাকবেন। নিজেরা এমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত হবেন না যাতে কেউ অপপ্রচারের সুযোগ পায়।নিজেদেরকে জনগণের আস্থায় রাখুন। জনগণের আস্থায় রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।”

কোনো ‘হঠকারী’ সিদ্ধান্তের কারণে যাতে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা নষ্ট হবার পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে ছাত্রদলের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে সতর্ক ও সজাগ থাকার আহ্বান জানান তারেক রহমান।

তিনি বলেন, “মনে রাখা দরকার, লোভ বা লাভের ঊর্ধ্বে উঠে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ এবং স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়তে বিশেষ করে ছাত্র-তরুণদের ভূমিকা অপরিসীম।”

কোনটা আগে, সংস্কার নাকি নির্বাচন– এই ধরনের প্রশ্নকে ‘অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কূটতর্ক’ হিসেবে বর্ণনা করেন তারেক রহমান।

তিনি বলেন, “আমাদের দল বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলের গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার এবং নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন। বিদ্যমান ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করতে সংস্কার একটি অনিবার্য ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।একইভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টেকসই এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নির্বাচনই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর পন্থা। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোটের অধিকার প্রয়োগের যে সুযোগটি পায়, সেটি রাষ্ট্র-জনগণের রাজনীতির ক্ষমতা নিশ্চিত করে।

“বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্রে জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা না গেলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা পুঁথিগত সংস্কার শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই টেকসই হয় না। অন্তবর্তীকালীন সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে… সংস্কার কার্যক্রম অবশ্যই প্রয়োজন। এই কারণে অন্তবর্তীকালীন সরকার হয়ত তাদের দৃষ্টিতে অনেক বড় বড় সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে এই সব কর্মসূচির আড়ালে জনগণের নিত্য দুদিনের দুর্দশা উপেক্ষিত থাকলে জনগণ হয়ত খোদ সরকারের সংস্কার দাবি নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হবে।”

তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে জনগণের মনে প্রশ্ন উঠেছে, পলাতক স্বৈরাচারের আমলে সৃষ্ট বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার ভেতর আনতে সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে? ফ্যাসিস্ট আমলে দায়ের করা লক্ষ লক্ষ মামলায় এখনো কেন প্রতিদিন মানুষকে আদালতের বারান্দায় ছুটোছুটি করতে হচ্ছে?”

অন্তর্বর্তী সরকারেরে উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্তে চেয়ারম্যান বলেন, “সংস্কার কিংবা গৃহীত পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থতার পরিচয় দিতে চাইলে ষড়যন্ত্রকারীরা ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট বিনষ্ট করার সুযোগ নেবে। এরই মধ্যে তারা একাধিকবার অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা চালিয়েছে। হাজারো ছাত্র জনতার রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা দেশে গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি দেখতে চায় না। এই কারণে জনগণের পক্ষের রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এই সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে।”

নতুন দল গঠনের উদ্যোগ নিয়ে তারেক রহমান বলেন, “রাষ্ট্র, রাজনীতি, সরকারের প্রচলিত বিধি ব্যবস্থা সংস্কার করে আরও উন্নত বিধি ব্যবস্থার পক্ষে ছাত্র-তরুণরা অবস্থান নেবে সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে, এটাই স্বাভাবিক, এটাই তারুণ্যের ধর্ম।

“দেশে প্রয়োজনে আরও নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটবে, এটাই গণতান্ত্রিক রীতি। এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রয়োজনে বিএনপি সকল গণতান্ত্রিক উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।বিএনপি তার জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত সকল পরিস্থিতিতে সকল সময়ে বহু দল ও মতের চর্চার পক্ষে।”

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্র দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই আলোচনা সভা হয়। মিলনায়তন ছাড়াও ইন্সটিটিউশনের বাইরে প্যান্ডেল টানানো হয়। বাইরে বড় পর্দায় দেখানো হয় অনুষ্ঠান।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে সংগঠনের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে তারেক বলেন, “তোমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের প্রধান হাতিয়ার।রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। তবে শিক্ষার্থী হিসেবে তোমাদের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হতে হবে লেখাপড়া, লেখাপড়া এবং লেখাপড়া।”

লেখাপড়ার পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমে সস্পৃক্ত হওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেকে একজন আদর্শ শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হও।শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক, আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখা জরুরি, আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামীর বাংলাদেশ। সুতরাং শিক্ষার্থীদের শিক্ষা-দীক্ষায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করা না গেলে নিশ্চিতভাবে হয়ত আবারো পথ হারাবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আজকের যে অবস্থা, যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, এই সংকট একমাত্র সমাধান হতে পারে একটা সফল নির্বাচনের মাধ্যমে। এটা ইতিহাসেও প্রমাণিত। আমরা সেই কথা বার বার বলে আসছি।

“আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে সেই চক্রান্তের ধারা শুরু হয়েছে, যেটা অতীতে হয়েছে বহুবার। যার ফলে আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হারিয়েছি, যার ফলে আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ৬ বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। যার ফলে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবকে বিদেশে থাকতে হচ্ছে।”

ফখরুল বলেন, “এই চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে… সত্যিকারভাবে যারা বাংলাদেশে বিশ্বাসী, যারা জোর গলায় বলতে পারে সবার আগে বাংলাদেশ, সেই দলকে, সেই দলের নেতাকে আজকে তারা দূরে সরিয়ে রাখতে চায়।

“আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, অতি দ্রুত একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশের মানুষকে এই সংকট থেকে মুক্ত করতে হবে, বাংলাদেশের মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের জ্ঞানভিত্তিক রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোরালোভাবে সম্পৃক্ত থাকার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ছাত্রদলের সাবেক নেতৃবৃন্দের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, রাকিবুল ইসলাম বকুল, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আকরামুল হাসান, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, রাশেদ ইকবাল খান, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র দলের গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বক্তব্য দেন।

ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের মতামত জানাতে পারেন।

খবরটি শেয়ার করুন..

এই বিভাগের আরো সংবাদ
Banglaheadlines.com is one of the leading Bangla news portals, Get the latest news, breaking news, daily news, online news in Bangladesh & worldwide.
Designed & Developed By Banglaheadlines.com