বাংলা হেডলাইনসঃ বিতর্কিত জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার সম্প্রতি স্বৈরচার এরশাদ বিরোধী আন্দলনের এক সাহসী যোদ্ধা নূর হোসেন সম্পর্কে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ও রাজনৈতিক সচেতন মানুষের মধ্যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। রাঙ্গার নিজ দলেও তার বক্তব্যেকে মেনে নেয়নি।
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ শ্লোগান তার বুকে ও পিঠে লিখে রাজধানীর রাজপথে আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। সেই থেকে শহীদ নূর হোসেন হিসেবে তার নাম ইতিহাসে স্থান পেয়েছে।
সংসদ সদস্য রাঙ্গা গত রোববার জাপার বনানীর কার্যালয়ে দলের এক আলোচনা সভায় নূর হোসেনকে ‘ইয়াবাখোর’ এবং ‘ফেনসিডিলখোর’ হিসেবে আখ্যায়িত করার পর সোমবার তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন রাজপথে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং রাঙ্গাকে জাতির কাছে ক্ষমা, এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে। নূর হোসেনের মা মরিয়ম বিবিসহ তার পরিবারের সদস্যরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করে রাঙ্গার বিচারের দাবিতে। যুবলীগ রাঙ্গাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে ও রাজধানীতে রাঙ্গার কুশপুত্তলিকা দাহ করে।
জাপার নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভের ঝড় মঙ্গলবারও বইতে থাকে রাঙ্গা তার মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশের পরও।
নূর হোসেনের মা মরিয়ম বিবি বলেন সংসদ থেকে যেন ওকে (রাঙ্গাকে) বহিষ্কার করে, কোন দল যেন ওকে না রাখে।
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে মসিউর রহমান রাঙ্গা বাধ্য হয়েছেন তার মন্তব্য প্রত্যাহার করতে ও ক্ষমা চেতে। মঙ্গলবার গণমাধ্যমের সামনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে রাঙ্গা বলেন যে অনিচ্ছাকৃত ভাবে আমার মুখ থেকে নূর হোসেন সম্পর্কে কিছু অযাচিত কথা বেরিয়ে আসে যা নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যদের মনে আঘাত করেছে। এ জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও অনুতপ্ত।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার ঢাকায় স্বেচ্ছাসেবকলীগের মহানগর দক্ষিণ শাখার সম্মেলনে বলেন আমাদের নেত্রীর বদৌলতে যারা রাজনীতিতে অক্সিজেন নিয়েছে তারা নেত্রীকেও কটাক্ষ করে। কথা মুখ থেকে ফসকিয়ে গেলে আর ফিরে আসে না। কটাক্ষ করলে জনগণ কাউকে ক্ষমা করবে না। এই ধরনের কটাক্ষ এবং মন্তব্য আমাদের রাজনীতির পরিবেশকে নষ্ট করে।
অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বলেন তাকে (নূর হোসেন) তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে সংসদ সদস্য মসিউর রাহমান রাঙ্গা একটি বক্তব্য রেখেছেন। তার (নূর হোসেন) সম্পর্কে তিনি যে শব্দটি ব্যাবহার করেছেন তার (রাঙ্গা) এখানে (সংসদে) দাড়িয়ে দুঃখ প্রকাশ করা এবং জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।
জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি সংসদে বলেন এই বক্তব্য ( রাঙ্গার মন্তব্য) জাতীয় পার্টির বক্তব্য না । এটা কোন রাজনৈতিক বক্তব্য হতে পারে না। এটা রাঙ্গার নিজস্ব বক্তব্য হতে পারে।