সাজ্জাদুল তুহিন, বাংলা হেডলাইনস নওগাঁ প্রতিনিধি: উত্তরের জেলা নওগাঁর একটি হাসপাতাল। প্রবেশ পথের রাস্তায় আঁকানো মনোমুগ্ধকর আলপনা।
সেই রাস্তা দিয়ে সামনের দিকে যেতেই ডান দিকে চোখে পড়বে একটি পুকুর। শান বাঁধানো রঙিন ঘাট। সেখান থেকে অদূরেই বানানো হয়েছে খেয়াঘাট; যেখানে বাঁধা আছে একটি ডিঙি নৌকা। নৌকাটি চালানোর জন্য নয় পুকুরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য রাখা হয়েছে। আর পুকুরের পানির দিকে তাকাতেই যেন চোখ স্থবির হয়ে যায়। পানির উপর বিছানো সবুজ পাতা ভেদ করে হেসে ওঠে লাল-সাদা একেকটি পদ্ম। ফুটে থাকা ভাসমান একেকটি পদ্মের রূপশোভা অভিভূত করে যেকোনো বয়সের মানুষদের।
ছবির মতো সাজানো, হৃদয়কাড়া দৃশ্য আটকে রাখতে পারে না দুরন্ত শৈশবকে। হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা অনেকেই এ পুকুরের পাড়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন পদ্মের সৌন্দর্য। মুগ্ধ হন তারা।
বলছিলাম, সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কথা। সেখানকার একটি পুকুরে দেখা মিলল এমন দৃশ্য। এ যেন সত্যিই সেই (গোবরে পদ্মফুল) প্রবাদ বাক্যটির মতো। লাল রঙে আপন সাজে সেজেছে পদ্মফুল, আলতো করে ছড়িয়ে দিয়েছে সৌন্দর্য। ফুলে আর পাতায় ভরে গেছে সমস্ত পুকুর। ছড়িয়ে পড়েছে লাল পদ্মের আভা। যে পুকুরের দিকে একসময় মানুষ ফিরেও তাকাত না, সেই পুকুরটি ঘিরে এখন তৈরি হয়েছে এমন মনোরম পরিবেশ।
জানা যায়, এক সময় পুকুরটি ছিল ময়লার ভাগাড়। দুর্গন্ধে যাওয়া যেত না আশপাশে। পরিস্কার করা হত হাসপাতালের রোগীদের নোংরা কাপড় চোপড়। ফলে ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছিল। ২০১৮ সালে আলতাদিঘীতে ঘুরতে গিয়ে পদ্ম ফুল দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুহুল আমিন।
পরে তিনি এই পুকুরটাকে পরিস্কার করে ধাপে ধাপে সেখানে পদ্ম ফুল রোপণ করেন। বর্তমানে প্রায় দেড় বিঘা জলাশয় বিশিষ্ট পুকুরটিতে ফুলে আর পাতায় ভরে গেছে।
হাসপাতালে ঘুরতে আসা স্থানীয় দর্শনার্থী মনিরুজ্জামান বলেন, হাসপাতালের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে পুকুরের ফুটে থাকা পদ্ম ফুল। অসাধারণ সুন্দর প্রাঙ্গণ। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর এখানে এসে থাকি। বলা যায়, বাতাসে পদ্মের দোলা মুহূর্তেই ভালো করে দেবে যে কারও মন।
সুরজ নামে এক দর্শনার্থী বলেন, পুকুরের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি। শুনেছি এখানে আগে নাকি ময়লার ভাগাড় ছিল। কিন্তু এইটাকে পরিস্কার করে কত সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা হয়ছে। কতসুন্দর ভাবে পদ্ম ফুল ফুটে আছে। পুকুরের দৃশ্য আসলেই খুবই সুন্দর।
স্ত্রীকে নিয়ে পুকুর ঘাটে বসেছিলেন নজরুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধ। কেন ঘাটে বসে আছেন, জানতে চাইল তিনি বলেন, তোমার চাচিকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছিলাম। ডাক্তার দেখানো শেষ হয়ে গেছে। এজন্য এই পুকুর পাড়ে একটু বসে আছি। এর আগে এই পুকুর পাড়ে এসেছিলেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে এসেছিলাম ডাক্তার দেখাতে। তখন এই পুকুরের পানি ছিল কালো। ময়লা আবর্জনা পড়ে ছিল। আজ দেখলাম পুকুরটি পরিস্কার করে অনেক সুন্দর করা হয়েছে। কী সুন্দর হয়ে ফুটে আছে পদ্মফুল। এখন তো আর পদ্ম ফুল দেখাই যায় না। খুব ভালো লাগলো পদ্ম ফুল দেখে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুহুল আমিন বলেন, ২০১৮ সালের আলতা দীঘিতে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে পদ্মফুল দেখে আমি মুগ্ধ হই। তখন মাথায় আসল আমাদের হাসপাতাল চত্বরেও তো একটা পুকুর আছে সেখানে পদ্মফুল লাগানো যায় কিনা। তাহলে পুকুরটিও দর্শনীয় হবে, সৌন্দর্য বাড়বে। পরে পুকুরটি পরিস্কার করে সেখানে তিন ধাপে পদ্মফুল লাগানো হয়। গতবছর কম হয়েছিল। এ বছর পুরো পুকুরজুড়েই পদ্মফুল ফুটেছে। আলতাদিঘী ছাড়া আশপাশে আর কোথাও পদ্মফুল ফুল চোখে পড়ে না।
তিনি আরও বলেন, নোংরা পুকুরটাকে পরিস্কার করে একটি সুন্দর মনোরম পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। পুকুরপাড়ে একটা পুরাতন ঘাট ছিল। সেটাকে রং করে আলপনা আকারে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। পকুরে একটি দৃষ্টিনন্দন নৌকা রাখা হয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালে যারা সেবা নিতে আসেন তাদের পাশাপাশি অনেকেই আসেন এই পরিবেশ দেখার জন্য। অনেকে ছবি তোলেন। আনন্দ পান। এছাড়াও যারা সেবা দেয় তাদেরও মন ভালো থাকবে। যারা সেবা নিতে আসে তাদেরও মন ভালো থাকবে। তাদেরও একধরনের মনের প্রশান্তি হয়। এটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। সেই কাজগুলোই আমরা করেছি।
পুকুর থেকে শুরু করে পুরো হাসপাতালকে সেইভাবে সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলেও জানান এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।