বাংলা হেডলাইনস: গণতন্ত্র বিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেছেন, “স্বাধীনতা প্রিয় জনগণকে আমি একটি বিষয় আবারও স্মরণ করিয়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানাতে চাই, আমি নিজেও সর্তক থাকতে চাই-সেটি হলো গণতন্ত্র বিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনো কিন্তু থেমে নেই।
“অন্তর্বতীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা দেশে-বিদেশে, শাসনে-প্রশাসনে এখনো সক্রিয়।”
শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের শোভাযাত্রার আগে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, “এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। কারণ নিজেদেরকে সতর্ক করতে চাইলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে- এটি আজ জনগণের চাওয়া।
‘‘আসুন, এই লক্ষ জনতার মিছিলকে কোনোভাবেই বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। এই প্রত্যাশা রেখে এই মিছিলের সাফল্য কামনা করে এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।”
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ‘ফ্যাসিবাদের পতন হওয়ায়’ জনতাকে শুভেচ্ছাও জানান তারেক।
তিনি বলেন, ‘‘১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিলো শত্রু-মিত্র চেনার দিন। আর ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশের শত্রু চিহ্নিত করার দিন।
‘‘আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে আর কেউ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারবে না ইনশাল্লাহ।”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সপরিবারের নিহত হওয়ার পর সেনাপ্রধানের দায়িত্বে আসেন জিয়াউর রহমান। এরপর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান হয়, জিয়া হন গৃহবন্দি।
৭ নভেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে যুক্ত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়া। এর মধ্য দিয়ে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন, পরে দেশের প্রথম সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন।
বিএনপি এই দিনকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ এবং জাসদ ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করে। অন্যদিকে গত ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ দিনটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করত।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘এই ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার দিন, ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশকে আধিপত্যবাদের কবল থেকে মুক্ত করবার দিন।
‘‘আপনাদের নিশ্চয় জানা থাকার কথা, ৭ নভেম্বরের আগে ৩ নভেম্বর একটা অভ্যুত্থান হয়েছিল- খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে; খালেদ মোশাররফের লক্ষ্য ছিল- আবার আধিপত্যবাদকে প্রতিষ্ঠা করা, ওই এক দলীয় শাসনে দেশকে নিয়ে যাওয়া।”
তিনি বলেন, “এদেশের দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনগণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তাদেরকে পরাজিত করে সেদিন আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ এক নতুন ইতিহাস রচনা করে।
“সেই ইতিহাস ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাস; সেই ইতিহাস ছিল বাংলাদেশকে আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস….দেশের মানুষকে একটা স্বাতন্ত্র পরিচিতি দেওয়ার ইতিহাস।”
ফখরুল বলেন, ‘‘আজকে এবছর আমরা আরেকটা অভ্যুত্থান দেখেছি… ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। দীর্ঘ ১৭ বছর আমরা লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে…এই ১৭ বছরে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছিল।
দুপুর থেকেই রঙিন টুপি পরে নয়াপল্টনে জড়ো হওয়া বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী বড় ধরনের শোডাউনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেন।
দলের শীর্ষ নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে তারা নির্বাচন ও তারেক রহমানসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান দেন।
ফকিরেরপুল থেকে কাকরাইল পর্যন্ত হাজার হাজার নেতা-কর্মীর এ সমাবেশে জনসমুদ্রে রূপ নেয়। বিকাল ৪টায় নয়া পল্টন থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়। কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁর মোড় থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রাটি কাকরাইল মোড়-কাকরাইল মসজিদ-মৎস্যভবন-ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট-শাহবাগ-হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-বাংলামোটর-কারওয়ান বাজার-ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়।
শোভাযাত্রায় বিএনপি মহাসচিবসহ অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, রশিদুজ্জামান মিল্লাহ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নাসির উদ্দিন অসীম, শিরিন সুলতানা, মীর সরাফত আলী সপু, মীর নেওয়াজ আলী, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, রফিকুল ইসলাম, সাইফুল আলম নিরব, রাকিবুল ইসলাম বকুল,নিলোফার চৌধুরী মনি, তাইফুল ইসলাম টিপু, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, এম মোনায়েম মুন্না, নরুল ইসলাম নয়ন, এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, হাসান জাফির তুহিন, রাকিকুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দিন নাছির, নিপুণ রায় চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা একটি খোলা ট্রাকে এ মিছিলে অংশ নেন। ঢাকা সিটি করপোরেশনের সব ওয়ার্ডসহ মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদীসহ আশ-পাশের জেলাগুলো থেকে বাসে করে নেতাকর্মীরা এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন।