বাংলা হেডলাইনস বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে নেতৃবৃন্দের সাথে পদবঞ্চিতদের অসন্তোষ চলছে। তাদের নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
সভাপতি মজিবর রহমান মজনু ঘোষিত কমিটির পক্ষে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন বঞ্চিতদের পক্ষে। পদ বঞ্চিতরা গত কয়েকদিন ধরে দলীয় কার্যালয়ে তালা দিয়ে সামনে অবস্থান নেয়।
জেলা আওয়ামী লীগের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার তালা খুলে দেওয়া হলেও বঞ্চিতরা কমিটি বাতিল না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
শুক্রবার দুপুরে নবঘোষিত কমিটির নেতারা শহরে ব্যাপক শোডাউন ও সাতমাথায় মুজিব মঞ্চে মতবিনিময় ও পরিচিতি সভা করেছে। আর বঞ্চিতরা পাশেই টেম্পল রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পাল্টা সমাবেশ করে। উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মাঝে অবস্থান নেওয়ায় নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নবঘোষিত জেলা ছাত্রলীগের নেতারা শহরে ব্যাপক শোডাউন শেষে সাতমাথায় মুজিব মঞ্চে আসেন। এর আগে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী শহরে আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জড়ো হন।
মুজিব মঞ্চে মতবিনিময় ও পরিচিতি সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন নবাব, পিপি আবদুল মতিন, দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাজেদুর ইসলাম শাহিন, শ্রমিক লীগ নেতা সামসুদ্দিন শেখ হেলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক তিতাসের সঞ্চালনায় পরিচিতি সভায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মজিবর রহমান মজনু বলেন, বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সকলে যোগ্য ও ত্যাগী। কিন্তু কমিটিতে পদ মাত্র দুটি। অনেকে কেন্দ্রে তাদের সিভি জমা দেন। কেন্দ্র সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে দু’জনকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করেছেন। তাই আপনারা সভাপতি সজীব সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম জয়কে মেনে নিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সকলে একত্র হয়ে সরকার বিরোধী সকল কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানাবেন।
অপরদিকে পাশেই টেম্পল রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পদবঞ্চিতরা সমাবেশ করেন। তারা গত কয়েকদিন ধরে সেখানে অবস্থান নিয়ে কমিটি ভেঙে দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ করছেন। তারা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও নতুন সভাপতি ও সম্পাদকের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন।
তাদের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন। তিনি বলেন, নবঘোষিত কমিটিতে অনেক অযোগ্য রয়েছে। গত চারদিন ধরে কমিটি বাতিলের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি। এ কমিটি বাতিলের ব্যাপারে আগামী দু’দিনের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও অন্যদের সাথে কথা বলা হবে। এরপর সভা ডেকে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি পদবঞ্চিত নেতাদের এ সময় পর্যন্ত পার্টি অফিসের সামনে অবস্থান না দিতে অনুরোধ জানান। পার্টি অফিস উন্মুক্ত থাকলেও যাদের নামে কমিটি হয়েছে তারাও আসবেন না।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাশরাফি হিরো, পদবঞ্চিত তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ, মাহফুজার রহমান, মিথিলেস কুমার প্রসাদ, রাকিবুল হাসান শাওন, সিদ্ধার্থ কুমার সাহা, নূর মোহাম্মদ সাগর প্রমুখ।
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সূত্র জানায়, গত ৭ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত জেলা ছাত্রলীগের ৩০ সদস্যের কমিটি ঘোষণার খবর প্রচার হয়। এতে সজীব সাহাকে সভাপতি ও আল মাহিদুল ইসলাম জয়কে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এতে পদবঞ্চিতদের মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা তাৎক্ষণিকভাবে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর গত চারদিন ধরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ চলছিল। এ সময় তারা স্কুলের গাড়ি ভাংচুর ও একাধিক নেতাকর্মীকে মারধর করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতাকর্মীরা জানান, সজীব সাহাকে দলীয় কর্মকান্ডে দেখা গেলেও সাধারণ সম্পাদক জয়কে দেখা যায়নি। অথচ ত্যাগীদের বাদ দিয়ে জয়কে সম্পাদক করা হয়েছে। তারা আরো বলেন, একই অবস্থা হয়েছে জেলা মহিলা লীগে। সেখানে রাজনীতি না করা হাইব্রীড একজনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। জেলা নেতৃবৃন্দকে পাশ কাটিয়ে কমিটি করায় মহিলা লীগের ওই কমিটি আজও স্থানীয়ভাবে স্বীকৃতি পায়নি। তাদের জেলা আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডে ডাকা হয়না। নেতৃবৃন্দ জেলা ছাত্রলীগের মত জেলা মহিলা লীগের কমিটিও বাতিল করতে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বগুড়া সদর থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, ছাত্রলীগের নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ মুজিব মঞ্চে ও পদবঞ্চিত নেতারা দলীয় কার্যালয়ে সামনে সমাবেশ করেছেন। যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা সামাল দিতে তারা কঠোর অবস্থানে ছিলেন। ফলে শান্তিপূর্ণভাবে দু’পক্ষের কার্যক্রম শেষ হয়।